কুমিল্লার দেবীদ্বার পয়েন্টে গতকাল শুক্রবার সকাল ৯টায় গোমতী নদীর পানির সমতল ছিল ৮.৫৮ মিটার, যা বিপৎসীমার ৫৩ সেন্টিমিটার ওপরে। একই সময়ে নদীর পানি কুমিল্লা পয়েন্টে বইছিল ১২.৪৮ মিটার উচ্চতায়। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ১৯৮৮ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ৩৭ বছরের রেকর্ড বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এই সময়কালে গোমতীর পানি এতটা উচ্চতায় পৌঁছেনি।
অল্প সময়ের মধ্যে অতি মাত্রায় ভারি বৃষ্টিপাত
গোমতীর মতো উত্তর-পূর্ব, দক্ষিণ-পূর্ব ও পূর্বাঞ্চলের একাধিক নদ-নদীর পানি রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে গত কিছুদিনে।
নদী ও পানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মূলত বাংলাদেশের উজানে অবস্থিত ভারতের ত্রিপুরাসহ কয়েকটি রাজ্যে অল্প সময়ে অতিমাত্রায় ভারি বৃষ্টিপাতের কারণেই আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে এই অঞ্চলগুলোতে।
হালদা নদের পানি চট্টগ্রামের নারায়ণহাট পয়েন্টে গতকাল সকাল ৯টায় ১৫.৯০ মিটার এবং পাঁচপুকুরিয়া পয়েন্টে ৯.৪২ মিটার উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছিল। চট্টগ্রামের রামগড় পয়েন্টে ২২ আগস্ট সকাল ৯টায় ফেনী নদীর পানির উচ্চতা ছিল ১৯.৮ মিটার। দুটি নদীর ক্ষেত্রেই সংশ্লিষ্ট পয়েন্টে পানির স্তর ছিল গত ৩৭ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ফেনী, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সিলেটসহ বেশ কিছু জেলায় এই হঠাৎ বন্যা পরিস্থিতির পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে ভারতের উজানের রাজ্যগুলো, বিশেষ করে ত্রিপুরার অতিবৃষ্টি ও বন্যা। গত কিছুদিনে বাংলাদেশের এই অঞ্চলগুলোতেও অতিমাত্রায় ভারি বর্ষণ হয়েছে। তবে আবহাওয়াবিদ, জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ও পানি বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশের এই অঞ্চলগুলোতে বন্যার পেছনে উজানের বৃষ্টিই বড় ভূমিকা রাখে। দেশের অভ্যন্তরের বৃষ্টিপাতের ভূমিকা এখানে কম।
বাংলাদেশের পূর্বে অবস্থিত ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য। এই রাজ্যে গত কিছুদিন স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি বৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া মিজোরাম ও মেঘালয়ের মতো বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী রাজ্য বা অঞ্চলগুলোতেও সম্প্রতি স্বাভাবিকের চেয়ে অনেকটাই বেশি বৃষ্টি হয়েছে।
ভারতের আবহাওয়াবিষয়ক সরকারি সংস্থা আইএমডির ১৫ থেকে ২১ আগস্ট পর্যন্ত রাজ্যভিত্তিক বৃষ্টিপাতের হিসাব বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এ সময়ে ত্রিপুরায় গড়ে ৩১৪.৬ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে, যা স্বাভাবিকের চেয়ে ২৯৮ শতাংশ বেশি। বাংলাদেশের পূর্বে অবস্থিত ভারতের আরেক রাজ্য মিজোরামে এ সময় বৃষ্টিপাত স্বাভাবিকের চেয়ে ১১৭ শতাংশ এবং উত্তরে সীমান্তবর্তী রাজ্য মেঘালয়ে ৬৭ শতাংশ বেশি ছিল।
গত কিছুদিনের বৃষ্টিপাতের পরিপ্রেক্ষিতে আইএমডি এই রাজ্যগুলোকে গাঢ় নীল রঙে চিহ্নিত করেছে। স্বাভাবিকের চেয়ে ৬০ শতাংশ বা এর বেশি বৃষ্টি হলে আইএমডি সেটাকে ‘লার্জ এক্সেস’ বা অতিমাত্রায় বেশি বৃষ্টি হিসেবে শ্রেণিভুক্ত করে মানচিত্রে গাঢ় নীল রঙে চিহ্নিত করে।
এদিকে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, গত ১৯ আগস্ট সকাল ৯টা থেকে ২০ আগস্ট সকাল ৯টা পর্যন্ত শুধু ফেনীর পরশুরামেই ৩০৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। এদিন কুমিল্লায় ২১০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। এ ছাড়া সিলেট, মৌলভীবাজার, নোয়াখালী ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন অঞ্চলে ১৫০ থেকে ২০০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। একই সময়ে ভারতের মেঘালয়ের বৃষ্টিবহুল এলাকা চেরাপুঞ্জিতে ৩২০ মিলিমিটার এবং ত্রিপুরার অমরপুরে ২৬৭ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। ত্রিপুরার অন্য অঞ্চলগুলোতেও এ সময় গড়ে ১৫০ মিলিমিটারের ওপর বৃষ্টি হয়।
২১ আগস্ট সকাল ৯টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জে ২১৫ মিলিমিটার, মৌলভীবাজারে ১৭৫ মিলিমিটার এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১৭০ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়। এ সময় ভারতের মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে ৩০৩ মিলিমিটার এবং ত্রিপুরার আগরতলায় ১৮২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসাবে, ২৪ ঘণ্টায় ৮৯ মিলিমিটার বা তার বেশি বৃষ্টি হলে সেটাকে অতিভারি বর্ষণ বলা হয়। গত কিছুদিনে চট্টগ্রাম বিভাগসহ দেশের বেশ কিছু অঞ্চলে এর চেয়ে দুই-তিন গুণ বেশি বর্ষণও হয়েছে।
অতিবৃষ্টি ও ভারতের জলাধারের ভূমিকা
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কেউ কেউ বলছেন, ভারতের ত্রিপুরায় অবস্থিত গোমতী নদীর ওপর থাকা ডম্বুর জলাধারের গেট খুলে দেওয়ায় এই বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আকস্মিক বন্যায় ডম্বুর জলাধারের কিছু ভূমিকা থাকলেও মূল কারণ অতিবৃষ্টি।
এ নিয়ে আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে গত বৃহস্পতিবার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, ডম্বুর জলাধারের গেট খুলে দেওয়ায় বাংলাদেশে হঠাৎ বন্যা হয়েছে—এ কথা সঠিক নয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অভিন্ন গোমতী নদীর ক্যাচমেন্ট (নদীতে যেদিক থেকে বৃষ্টির পানি নামে) এলাকায় কয়েক দিন ধরে বছরের সবচেয়ে ভারি বৃষ্টি হয়েছে। অতিবৃষ্টির কারণে এই ক্যাচমেন্টের পানি স্বাভাবিকভাবেই ভাটির দিকে নেমে বাংলাদেশে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি করেছে।
গতকাল অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এ বিষয়ে বলেছেন, জলাধার থেকে পানি ছাড়ার আগে বাংলাদেশকে জানানোর বিষয়টি ভারত এবার প্রতিপালন করেনি। গতকাল হবিগঞ্জের বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শনের সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, উজানের দেশে অস্বাভাবিক বৃষ্টি হওয়ায় পানি ছেড়ে দিতে হলে ভাটির দেশকে আগে জানাতে হয়। এতে ভাটির দেশের লোকজন প্রস্তুতি নিতে পারে। কিন্তু এবার এই জানানোর বিষয়টি ভারত প্রতিপালন করেনি।
বাংলাদেশে নদী ও পানি বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাগজে-কলমে ও মাঠ পর্যায়ে কাজ করেছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক আইনুন নিশাত। বর্তমানে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট রিসার্চের ইমেরিটাস অধ্যাপক আইনুন নিশাতের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সিলেট, মৌলভীবাজার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, ফেনী, খাগড়াছড়িসহ বন্যাকবলিত অঞ্চলগুলো ভারত সীমান্তের লাগোয়া। এসব অঞ্চলসংলগ্ন ভারতের উজানের অংশে অনেক বৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশেও কিছুটা হয়েছে। মূলত অতিবৃষ্টির প্রভাবেই এই বন্যা।’
শুধু কুমিল্লায় গোমতী নদীর পানি বৃদ্ধির পেছনে ডম্বুর জলাধারের কিছুটা ভূমিকা আছে বলে জানান আইনুন নিশাত। তিনি বলেন, ‘ডম্বুর জলাধারের কিছুটা প্রভাব গোমতী নদী এলাকায় পড়েছে। তবে বন্যার সৃষ্টি হয়েছে মূলত অতিবৃষ্টির কারণেই। জলাধারটি না থাকলেও এই অঞ্চলগুলোতে বন্যা হতো। ডম্বুরের গেট খুলে দিলে হয়তো পাঁচ ফুট পানি হতো, না খুললে চার থেকে সাড়ে চার ফুট।’
আইনুন নিশাত বলেন, গোমতী নদীতে নির্মিত ডম্বুর জলাধারের গেট খোলার সঙ্গে মুহুরী বা ফেনী নদীর পানি বৃদ্ধি কিংবা মৌলভীবাজার ও খাগড়াছড়ির বন্যার সম্পর্ক নেই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পাউবোর বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান কালের কণ্ঠকে বলেন, মূলত অতিবৃষ্টির ফলে এই বন্যা পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। সক্রিয় মৌসুমি বায়ু এবং সাগরের লঘুচাপের কারণে বৃষ্টি হয়েছে। সেই সঙ্গে আরো কিছু বিষয়ও কাজ করেছে। ভারতের ত্রিপুরাসহ উজানের প্রবল বৃষ্টিপাতের পানি ঢল আকারে সংলগ্ন বাংলাদেশের অঞ্চলগুলোতে নেমে এসেছে।
উদয় রায়হান বলেন, ‘ফেনীর পরশুরামে মুহুরী নদীতে এ বছরের ২ আগস্ট পানির উচ্চতা ১৪.২০ মিটারে পৌঁছেছিল। তখন কিন্তু এমন তীব্র বন্যা হয়নি। এবার পানি এর চেয়ে অনেক নিচে হলেও (২১ আগস্ট ১৩.৪২ মিটার ছিল নদীর পানি) বন্যা অনেক তীব্র হয়েছে। এর কারণ হলো উজানে, বিশেষ করে ত্রিপুরায় পানির উচ্চতা অনেক অতীত রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। এই কারণে প্রভাবটাও বেশি পড়েছে সামগ্রিকভাবে।’
উদয় রায়হান আরো বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে ভারতের বাঁধের বিষয়ে কোনো তথ্য আদান-প্রদান হয় না। তবে বৃষ্টিপাত ও পানিপ্রবাহের তথ্য নিয়মিতই পাঠায় ভারত।
প্রয়োজন পূর্বাভাসের পরিবর্তন ও বাঁধের রক্ষণাবেক্ষণ
এ ধরনের আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতি ভবিষ্যতেও সৃষ্টি হতে পারে উল্লেখ করে আইনুন নিশাত করণীয় সম্পর্কে বলেন, ‘প্রথমত, আমাদের পূর্বাভাসপদ্ধতি বদলাতে হবে, যাতে তা সাধারণ মানুষের বোধগম্য হয়। দ্বিতীয়ত, আমাদের বাঁধগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে। কারণ এখন থেকে আগামী ২০ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে এ ধরনের বন্যা আরো হতে পারে। এ জন্য পূর্বপ্রস্তুতি প্রয়োজন। তৃতীয়ত, পুনর্বাসনের ব্যাপারে এখনই চিন্তা করতে হবে।’
parallax ad
news_google_icon_128কালের কণ্ঠের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
প্রাসঙ্গিক
সম্পর্কিত খবর
ভয়াবহ বন্যায় অসহায় মানুষের বেঁচে থাকার লড়াই
ভয়াবহ বন্যায় অসহায় মানুষের বেঁচে থাকার লড়াই
বন্যা ও আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসায় মনিটরিং সেল গঠন
বন্যা ও আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসায় মনিটরিং সেল গঠন
পরশুরামে বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শন সেনাবাহিনী প্রধানের
পরশুরামে বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শন সেনাবাহিনী প্রধানের
বন্যার্তদের জন্য সহায়তা সংগ্রহ করছে গণ অধিকার পরিষদ
বন্যার্তদের জন্য সহায়তা সংগ্রহ করছে গণ অধিকার পরিষদ
জাতীয়
প্রকাশ: শনিবার, ২৪ আগস্ট, ২০২৪ ০৯:২৯
৮ অঞ্চলে ৬০ কিমি বেগে ঝড়ের আভাস
অনলাইন ডেস্ক
৮ অঞ্চলে ৬০ কিমি বেগে ঝড়ের আভাস
দেশের আট অঞ্চলে দুপুরের মধ্যে ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড় হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এ জন্য এসব এলাকার নদীবন্দরগুলোকে সতর্কতা সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
শনিবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরীণ নদীবন্দরের জন্য দেওয়া পূর্বাভাসে এমন তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও সিলেট অঞ্চলের ওপর দিয়ে দক্ষিণ/দক্ষিণ-পূব দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫-৬০ কিলোমিটার বেগে অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রবৃষ্টি হতে পারে।
এ জন্য এসব এলাকার নদীবন্দরগুলোকে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
news_google_icon_128কালের কণ্ঠের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
জাতীয়
প্রকাশ: শনিবার, ২৪ আগস্ট, ২০২৪ ০৯:০৫
মহৎ কাজে তিন বাহিনীসহ পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও ফায়ার সার্ভিস
নিজস্ব প্রতিবেদক
মহৎ কাজে তিন বাহিনীসহ পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও ফায়ার সার্ভিস
বন্যায় আটকে পড়াদের উদ্ধার করছেন সেনা সদস্যরা। গতকাল কুমিল্লায়। ছবি : কালের কণ্ঠ
স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় চরম বিপর্যয়ে দেশের অন্তত ১৩টি জেলার মানুষ। এই সংকট মুহূর্তে বন্যাদুর্গত বিভিন্ন জেলায় তিন দিন ধরে উদ্ধারকাজসহ ত্রাণ সহায়তা দিচ্ছেন তিন বাহিনীসহ বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যরা। তাঁদের পাশাপাশি রয়েছে স্থানীয় ভলান্টিয়ারসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের সামাজিক, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এবং ব্যক্তি পর্যায়ের সহযোগিতাও।
তবে গতকাল শুক্রবার বন্যাদুর্গত এলাকার মানুষকে উদ্ধার ও সার্বিক সহযোগিতায় এসব বাহিনীকে সর্বোচ্চ তৎপর দেখা গেছে।
দেশের এই দুর্যোগ মুহূর্তে অসহায় মানুষের পাশে বন্ু্লর মতো হাত বাড়িয়ে নিরলসভাবে তাদের কাজ করতে দেখা গেছে।
গতকাল আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বন্যায় খাগড়াছড়ি জেলার লক্ষাধিক মানুষ চরম বিপর্যয়ে পড়েছে। উদ্ধার কার্যক্রম চালিয়ে প্রায় দুই হাজার বানভাসি মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে এনেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। এ ছাড়া আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে অবস্থানরত অসহায় মানুষকে রান্না করা খাবার সরবরাহের পাশাপাশি প্রত্যন্ত অঞ্চলে শুকনা খাবার, মোমবাতি, দিয়াশলাই, স্যালাইনসহ প্রয়োজনীয় সামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।
আইএসপিআর জানায়, খাগড়াছড়ির চেঙ্গি, মাইনি ও কাসালং নদীর পানি বিপৎসীমার দুই থেকে ছয় ফুট অতিক্রম করায় আশপাশের এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়। বিপন্ন মানুষের সাহায্যার্থে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে সেনাবাহিনী। গতকাল দিনভর উদ্ধার তৎপরতা চালিয়ে অন্তত দুই হাজার খাগড়াছড়িবাসীকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে এনেছে সেনাবাহিনী।
বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রমের পাশাপাশি চিকিৎসাসেবা দেওয়া অব্যাহত রাখবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।
বন্যাদুর্গতদের জন্য এক দিনের বেতন দিল সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিজিবি
গতকাল আরেক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আইএসপিআর জানায়, সেনাবাহিনীর সব পদবির সেনা সদস্যদের এক দিনের বেতনের সমপরিমাণ অর্থ বন্যাদুর্গতদের সহযোগিতায় প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে প্রদান করা হয়েছে। ফেনী, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, নোয়াখালী, সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জে চলমান সাম্প্রতিক ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্যার্থে মানবতার সেবায় এই অর্থ দেওয়া হয়েছে। একইভাবে নৌবাহিনী ও বিজিবি বন্যাদুর্গতদের সহযোগিতায় তাদের এক দিনের বেতন দিয়েছে। অন্যদিকে বিমান ও নৌবাহিনী বন্যাদুর্গত এলাকায় নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে।
সব ধরনের সহায়তা নিয়ে পাশে আছে পুলিশ
বন্যাদুর্গত মানুষের জন্য সব ধরনের সহায়তা নিয়ে পাশে আছে বাংলাদেশ পুলিশ।
প্রয়োজনীয় সহযোগিতার জন্য যোগাযোগ করতে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ অথবা নিচে লিখিত বিভিন্ন জেলার নম্বরে যোগাযোগ করতে পুলিশ সদর দপ্তর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অনুরোধ করেছে।
নম্বরগুলো হলো : জেলা পুলিশ নোয়াখালী +৮৮০১৩২০১১১৮৯৮, জেলা পুলিশ লক্ষ্মীপুর +৮৮০১৩২০১১২৮৯৮, জেলা পুলিশ ফেনী +৮৮০১৩২০১১৩৮৯৮, জেলা পুলিশ ব্রাহ্মণবাড়িয়া +৮৮০১৩২০-১১৫৮৯৮, জেলা পুলিশ কুমিল্লা +৮৮০১৩২০-১১৪৮৯৮, জেলা পুলিশ চাঁদপুর +৮৮০১৩২০১১৬৮৯৮, জেলা পুলিশ রাঙামাটি+৮৮০১৩২০১০৯৮৯৮, জেলা পুলিশ বান্দরবান +৮৮০১৩২০১১০৮৯৮, জেলা পুলিশ খাগড়াছড়ি +৮৮০১৩২০১১০৩৯৮, জেলা পুলিশ চট্টগ্রাম +৮৮০১৩২০১০৮৩৯৮, জেলা পুলিশ কক্সবাজার +৮৮০১৩২০১০৯৩৯৮, জেলা পুলিশ মৌলভীবাজার +৮৮০১৩২০-১২০৬৯৮, জেলা পুলিশ হবিগঞ্জ +৮৮০ ১৩২০-১১৯৬৯৮।
বিজিবির উদ্ধার, খাবার বিতরণ ও চিকিৎসা তৎপরতা
রাঙামাটির মারিশ্যা ব্যাটালিয়নের (২৭ বিজিবি) অধিনায়ক লে. কর্নেল মোহাম্মদ আতিকুর রহমান জানান, গতকাল ওই ব্যাটালিয়নের দায়িত্বাধীন এলাকায় ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের কারণে মুসলিম ব্লক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মুসলিম ব্লক হাফেজিয়া মাদরাসা ও এতিমখানা এবং উপজেলা অ্যাডমিনিস্ট্রেশন স্কুল অ্যান্ড কলেজে আশ্রয় নেওয়া বন্যাদুর্গত পরিবারের ৫২০ জন সদস্যের মধ্যে রান্না করা খাবার বিতরণ করা হয়েছে।
এ ছাড়া মারিশ্যা ব্যাটালিয়নের (২৭ বিজিবি) মেডিক্যাল অফিসার মেজর গাজী মো. হাসানের অধীনে মুসলিম ব্লক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে ৩৬ জন পুরুষ, ৩৩ জন মহিলা, ৪৫ শিশুসহ বন্যাদুর্গত পরিবারের মোট ১১৪ জন অসুস্থ রোগীকে চিকিৎসাসেবা ও বিনা মূল্যে ওষুধসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে।
অন্যদিকে শ্রীমঙ্গল ব্যাটালিয়নের (৪৬ বিজিবি) অধিনায়ক লে. কর্নেল মোহাম্মদ মিজানুর রহমান সিকদার জানান, গতকাল শ্রীমঙ্গল ব্যাটালিয়নের (৪৬ বিজিবি) অধীন মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার মোকাবিল, কুরমা ও চাম্পাপাড়া সীমান্তবর্তী এলাকায় বিজিবির পক্ষে ৬০০টির বেশি পরিবারের মধ্যে শুকনা খাবার, বিনা মূল্য চিকিৎসা ও ওষুধ সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে।
গতকাল বিকেলে বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরীফুল ইসলাম জানান, বন্যাদুর্গত সব এলাকায় ত্রাণ বিতরণের পাশাপাশি বিজিবি ছাত্র সমন্বয়কদের কাছে ত্রাণ হস্তান্তর করেছে।
হেলিকপ্টারে র্যাবের উদ্ধার তৎপরতা
স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার সর্বগ্রাসী রূপ দেখল ফেনী জেলাবাসী। ফেনী জেলায় চলমান ভয়াবহ বন্যায় আটকে পড়া বন্যাদুর্গতদের র্যাব হেলিকপ্টারের মাধ্যমে উদ্ধার, চিকিৎসাসেবা ও ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেছে। কয়েক দিনের ভারি বর্ষণে ডুবে গেছে ফেনী জেলার বেশির ভাগ এলাকার বাড়িঘর, রাস্তাঘাট, স্কুল, কলেজ, মাদরাসাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান।
র্যাব সদর দপ্তর জানায়, চলমান বন্যা পরিস্থিতির শুরু থেকেই র্যাব ফোর্সেসের পক্ষ থেকে বন্যার্তদের ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল ফেনী জেলার বিভিন্ন এলাকায় র্যাব ফোর্সেসের পক্ষ থেকে পাঁচ শতাধিক অসহায় মানুষের মধ্যে শুকনা খাবার, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, খাবার স্যালাইন ও প্রয়োজনীয় ওষুধ বিতরণ করা হয়েছে।
পাশাপাশি ফেনীর পরশুরাম সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে একজন গর্ভবতী নারী, দুটি নবজাতককে উদ্ধার করে অক্সিজেন সাপোর্ট দিয়ে সুস্থ করে নিরাপদ স্থানে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া নারী, শিশু, বৃদ্ধসহ বন্যাদুর্গত এলাকা থেকে পানিবন্দিদের র্যাব উদ্ধার করে হেলিকপ্টারে নিরাপদ স্থানে নিয়ে গেছে।
বন্যাদুর্গতদের মানবিক সহায়তাসহ যেকোনো মানবিক প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট র্যাব কন্ট্রোলরুমের সঙ্গে (মোবাইল নম্বর : ০১৭৭৭৭১০৭৯৯) যোগাযোগের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
খাগড়াছড়িতে সেনাবাহিনীর ত্রাণ বিতরণ
বন্যাদুর্গতদের পাশে দাঁড়িয়েছে সেনাবাহিনীর খাগড়াছড়ি রিজিয়ন। গতকাল দুপুরে জেলা সদরের গঞ্জপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় বন্যাকবলিত মানুষের মধ্যে ত্রাণ ও খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। খাগড়াছড়ি রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শরীফ মো. আমান হাসান এসব সামগ্রী বিতরণ করেন।
ফায়ার সার্ভিস উদ্ধার করেছে ৭৭৯ জনকে
দেশের বন্যাকবলিত এলাকা ও উদ্ধারকাজ পরিদর্শন করেছেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন। গতকাল সকাল ১০টা থেকে দিনব্যাপী তিনি বন্যাকবলিত ফেনী ও আশপাশের এলাকা ঘুরে দেখেন।
২১ আগস্ট থেকে ২৩ আগস্ট বিকেল ৪টা পর্যন্ত দুর্গত এলাকার বিভিন্ন স্থানে আটকে পড়া ৭৭৯ জন নারী-পুরুষ ও শিশুকে উদ্ধার করে নিরাপদ আশ্রয়ে স্থানান্তর করেছে ফায়ার সার্ভিস। ফায়ার সার্ভিসের মিডিয়া সেল থেকে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
news_google_icon_128কালের কণ্ঠের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
প্রাসঙ্গিক
জাতীয়
প্রকাশ: শনিবার, ২৪ আগস্ট, ২০২৪ ০৮:৪৮
পানি ছাড়ার আগে জানানোর বিষয়টি পালন করেনি ভারত : সৈয়দা রিজওয়ানা
পানি ছাড়ার আগে জানানোর বিষয়টি পালন করেনি ভারত : সৈয়দা রিজওয়ানা
ফাইল ছবি
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, ‘উজানের দেশে যদি অস্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হয় এবং পানি ছেড়ে দেওয়ার প্রয়োজন হয়, তাহলে ভাটির দেশকে আগে থেকেই জানানোর প্রয়োজন হয়, যাতে ভাটির দেশের লোকজন নিজেদের প্রস্তুত করতে পারে এবং লোকজনকে সরানো যায়। কিন্তু এবার এই জানানোর বিষয়টি ভারত প্রতিপালন করেনি। ভারতের সঙ্গে আমাদের চুক্তিতেও এমনটি বলা হয়েছে।’
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান গতকাল শুক্রবার দুপুরে হবিগঞ্জ সদর উপজেলার মশাজান খোয়াই নদীসংলগ্ন বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শনকালে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন।
তিনি আরো বলেন, দেশকে বন্যামুক্ত রাখতে নদীকে নদীর মতো রাখা উচিত। বাঁধ সুরক্ষিত রাখা উচিত।
উপদেষ্টা আরো বলেন, ‘এবারের বিষয় থেকে শিক্ষা নিয়ে যত অভিন্ন নদী আছে সেগুলোর সব কটার ব্যাপারেই পানি ছেড়ে দেওয়ার প্রশ্ন দেখা দিলে যাতে আগাম সতর্কতা বাংলাদেশকে জানানো হয় সেই বার্তা ভারতে দেওয়া হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা ভারতীয় দূতাবাসকে বিষয়টি জানিয়েছেন।
প্রাকৃতিক সমস্যা আসবেই, কিন্তু এটি না জানানোর কারণে যাতে মানুষের সমস্যা না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে।’
এর আগে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জেলার সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের প্রধান ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন হবিগঞ্জের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক প্রশান্ত সোম মহান, পুলিশ সুপার আক্তার হোসেন, সেনাবাহিনীর লে. কর্নেল নাজির ও মেজর ইশরাত।
এ সময় খোয়াই রিভার ওয়াটারকিপার তেফাজ্জল সোহেল ও বাপার সভাপতি ইকরামুল ওয়াদুদ হবিগঞ্জের পরিবেশগত সমস্যাগুলো নিয়ে একটি পত্র প্রদান করেন।
সেখানে জরুরি ভিত্তিতে খোয়াই নদী খনন, নদী থেকে অবৈধভাবে মাটি ও বালি উত্তোলন বন্ধ, পুরান খোয়াই নদী দখলমুক্তকরণ, পুকুর ও জলাশয় দখলমুক্তকরণ এবং জেলার বিভিন্ন এলাকায় পাহাড় কাটা বন্ধ করার দাবি করা হয়। উপদেষ্টা এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান তাঁর পৈত্রিক গ্রাম চুনারুঘাট উপজেলার সদর ইউনিয়নের নরপতি হাবিলিতে উপস্থিত হয়ে বাবা সাবেক মন্ত্রী সৈয়দ মহিবুল হাসানের কবর জিয়ারত করেন। পরে মুড়ারবন্দ সিপাহসালার সৈয়দ নাসির উদ্দীনের মাজার জিয়ারত করেন তিনি। বিকেলে তিনি চুনারুঘাট উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে পরিবেশ অধিদপ্তর, বন অধিদপ্তর ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময়সভা করেন।
news_google_icon_128কালের কণ্ঠের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
জাতীয়
প্রকাশ: শনিবার, ২৪ আগস্ট, ২০২৪ ০৮:৪৩
২৪ জেলায় সাড়ে তিন লাখ হেক্টর জমির ফসলের ক্ষতি
নিজস্ব প্রতিবেদক
২৪ জেলায় সাড়ে তিন লাখ হেক্টর জমির ফসলের ক্ষতি
অতিবৃষ্টি এবং উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে দেশের উত্তর-পূর্ব, দক্ষিণ-পূর্ব ও পূর্বাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪টি জেলার তিন লাখ ৩৮ হাজার ৯২২ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যা এসব জেলার মোট আবাদি জমির প্রায় ২৩ শতাংশ। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রোপা আমনের আবাদ। এসব জেলার প্রায় দুই লাখ ৩৪ হাজার ২৯৩ হেক্টর জমির রোপা আমনের আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, নরসিংদী, মানিকগঞ্জ, ময়মনসিংহ, শেরপুর, নেত্রকোনা, সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, পাবনা, খুলনা, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও চাঁদপুর জেলায় কৃষিতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এসব জেলায় আবাদ হয়েছে বা দণ্ডায়মান রয়েছে এমন ফসলের জমির পরিমাণ ১৪ লাখ ৭৩ হাজার ৯৫৬ হেক্টর। এর মধ্যে আক্রান্ত হয়েছে তিন লাখ ৩৮ হাজার ৯২২ হেক্টর জমির ফসল।
এর মধ্যে আউশের জমি ৬৮ হাজার ৫১১ হেক্টর, রোপা আমন দুই লাখ ৩৪ হাজার ২৯৩ হেক্টর, বোনা আমন এক হাজার ৬৩৭ হেক্টর, রোপা আমন বীজতলা ১৮ হাজার ৯৫২ হেক্টর, শাক-সবজি ১৪ হাজার ১১১ হেক্টর, আদা ১৪৭ হেক্টর, হলুদ ১৯৮ হেক্টর, আখ ৬১৮ হেক্টর, পান ৪৫৬ হেক্টর এবং কলা এক হাজার ৬৭৬ হেক্টর।
এ বিষয়ে কৃষিসচিব মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘অপ্রত্যাশিত এই বন্যা মোকাবেলায় কৃষকদের সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হবে। পানি নেমে গেলেই পুরোপুরি ক্ষতি নির্ধারণ করে কৃষকের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। এ ছাড়া উপকরণ সহায়তা দেওয়া হবে।
আমাদের মাঠ পর্যায়ের সব কৃষি কর্মকর্তা এই মুহূর্তে কৃষকদের সঙ্গে রয়েছেন। ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে বিকল্প সব ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হবে।’
প্রাণিসম্পদ খাতে ক্ষতি প্রায় ২১ কোটি টাকা
গতকাল সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত পাওয়া তথ্য মতে, বন্যায় প্রাণিসম্পদ খাতে এ পর্যন্ত ২০ কোটি ৮৪ লাখ ১৬ হাজার ৪০০ টাকার ক্ষতি হয়েছে। বন্যায় পশু মারা গেছে কিংবা ভেসে গেছে এমন তথ্যের ভিত্তিতে ক্ষতি নিরূপণ করেছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। এর মধ্যে মারা গেছে ১১৬টি গরু, ১৩২টি ছাগল, ২৯টি ভেড়া, এক লাখ ৯৪ হাজার ৬০০টি মুরগি এবং এক হাজার ৫৬৩টি হাঁস।
তবে এখনো বন্যাকবলিত সব উপজেলার তথ্য চূড়ান্ত করতে পারেনি তারা।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের বন্যা-পরবর্তী উদ্যোগ
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কৃষকদের জন্য বন্যা-পরবর্তী সময়ে উঁচু এলাকায় আপৎকালীন নাবী জাতের রোপা আমন বীজতলা তৈরি, ভাসমান বীজতলা তৈরি, স্থানীয় জাতের পরিবর্তে উফশী জাত আবাদের উদ্যোগ নেবে। এ ছাড়া স্বল্পমেয়াদি রোপা আমন ধানের (ব্রি ধান-৫৬, ৫৭, ৭৫, ৮৭) আবাদ, বন্যা সহনশীল জাত ব্রি ধান-৫১, ৫২, ৭৯ জাতের আবাদ বৃদ্ধি, ভাসমান বেডে শাক-সবজি আবাদের ব্যবস্থা করা হবে। বস্তায় লতা ও মসলা (মরিচ, আদা) জাতীয় শস্যের আবাদ, নাবী জাতের রোপা আমন, বিআর-২২, ২৩ এবং স্থানীয় গাইঞ্জা, আবছায়া, ডাবল ট্রান্সপ্লান্টিং পদ্ধতিতে রোপা আমন চাষ বাড়ানো হবে।
ধানের অঙ্কুরিত বীজ সরাসরি বপন করার উদ্যোগ নেওয়া হবে। এ ছাড়া চলমান কৃষি প্রণোদনা ও পুনর্বাসন কর্মসূচি জোরদার করা হবে। আগাম জাতের শীতকালীন সবজি উৎপাদনের বিষয়ে কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে।
পাঠকের মতামত